অজান্তেই কি আপনি শয়তানের পূজারী!!!
অরণ্য ইমতিয়াজ: আমরা কোরআন
শরিফ, বাইবেল, গীতা সব জায়গাতেই আল্লাহ্ ও শয়তানের অস্তিত্ব জানতে পারি। আল্লাহর
পথ পবিত্র ও সুন্দর অন্যদিকে শয়তানের পথ অপবিত্র কুৎিসত।আমরা কি আল্লাহর পবিত্র
পথের অনুসারী নাকি অজান্তেই পূজা করে চলেছি শয়তানের???
১৭৭০ সালে
এমশেল মেয়ার রথসটাইল্ড এর নেতৃত্বে ইউরোপীয় ব্যাংকার সিন্ডিকেট প্রতিষ্ঠা করে
ইলুমিনাতি নামের এক সংগঠন। ইলুমিনাতি (দ্যা অর্ডার অব ইলুমিনাতি) শব্দের অর্থ
“যারা কোনো বিষয়ে বিশেষভাবে আলোকিত বা জ্ঞানার্জনের দাবী করে” অথবা ধর্মীয় বিষয়ে বিশেষ
জ্ঞান সম্পন্ন কোনো দল।
ইলুমিনাতি
প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল রাজতন্ত্রের বিনাশ, বিশ্ব সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা,
পারিবারিক বন্ধন এবং বিবাহ ছিন্ন করা, উত্তরাধিকার এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার
রদ করা এবং সর্বোপরি জাতিগত পরিচয় মুছে ফেলা।
১৭৭৩ সালে
রথসচাইল্ড ১২ জন ইহুদি ক্যাবালিস্ট ব্যাংকারদের নিয়ে অর্থনৈতিক আধিপত্য বিষয়ে একটি
পরিকল্পনা সভার আয়োজন করেন এবং ১৭৭৬ সালে এই দলটি এডাম ওয়াইশপ্ট নামে ২২ বছর বয়সী
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ইন্সট্রাক্টরকে দেয় ইলুমিনাতি পুণর্গঠিত করার জন্য। এই এডাম
ছিল একজন ইহুদি ধর্মযাজকের ছেলে কিন্তু সে নিজেকে পরিচয় দিত একজন ক্যাথলিক হিসেবে।
ধারণা করা হয়, ১৭ থেকে ২০ শতকের মধ্যে যতগুলি বিপ্লব এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড
সংগঠিত হয়েছে তার পিছনে ছিল এই সংগঠনটির হাত। এদের একচেটিয়া ক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণ
ছিল সরকারের ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে এবং এটা তারা ব্যবহার করেছে বিশ্ব জয় করার জন্য।
এদের প্রধান
উদ্দেশ্য হলো, (ওয়ান অর্ডার ওয়ার্ল্ড) অর্থাৎ শুধুমাত্র তাদের সিদ্ধান্তেই যেন
প্রথিবী চলে। আর এটি বাস্তবায়ন করার জন্য তারা ইতিমধ্যে অনেক রাজনৈতিক বিষয়ে
হস্তক্ষেপ করেছে। ধারণা করা হয়, অনেক প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় এসেছেন ইলুমিনাতির
সহায়তায়। আর ইলুমিনাতি তাদের পুতুলের মতো ব্যবহার করে। এমনও ধারণা করা হয়, অনেক রাজনৈতিক
হত্যাকান্ড ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পেছনে তাদের হাত রয়েছে।
ইলুমিনাতি
কখনোই নিজের নামে কোনো কর্মকান্ড পরিচালিত করতো না বা করে না। এরা সবসময় নিজেদের
পর্দার আড়ালে রাখে এবং অন্যের দ্বারা নিজেদের কাজ করিয়ে নিতে অভ্যস্ত। এ বিষয়ে
এডাম ওয়াইশপ্ট তার লেখনীতে বলেছিলেন, আমাদের কর্মকান্ডের শক্তি হচ্ছে আমাদের
লুকায়িত পরিচয়। একে উন্মোচিত করো না কখনো এবং কোথাও। সকল কাজ অন্যের নামে এবং
অন্যকে দিয়ে করিয়ে নাও।
এরা মূলত
’বাপহমেট’ নামক শয়তানকে পুজা করে। তাদের ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে তারা কাউকে ভয়
পেতে মানা করে। অর্থাৎ কোন কিছুতে কোন বাধা নেই সেটা যদি অজাচারও হয়। তারা চায়
এসবই হোক। কারণ এতে সভ্যতা খুব দ্রুত ধ্বংস হবে। যার ফলে তারা মানুষকে বশে আনবে।
আর তাই তারা চেস্টা করে বেশি করে যৌনতার প্রতি আকর্ষিত করতে। তারা মানুষকে বশে
আনার জন্য এমনভাবে প্রচার করে যাতে মানুষ খুব সহজেই আকর্ষিত হয়। এদের প্রধান
প্রচার প্ল্যানিং হলো গুপ্ত বার্তার মাধ্যমে হিপনোটাইজ করা। একটি পেরেক যেমন ধীরে
ধীরে আঘাত করতে করতে দেয়ালে গেঁথে যায়, ঠিক গুপ্ত বার্তা প্রদানের মাধ্যমে তারা
এভাবে ইলুমিনাতির প্রতি মানুষকে আহ্বান করে। আর মানুষ অনেক সময় নিজের অজান্তেই এর
ফাঁদে জড়িয়ে পরে। এরা বিশেষ অঙ্গভঙ্গী, বার্তা এবং চিহ্নের মাধ্যমে বেশি প্রচার
করে। কার্টুন, মুভি, গান, বই এমনকি সংবাদ মাধ্যম ও বিভিন্ন বিনোদনমূলক চ্যানেলকেও
তারা ব্যবহার করে থাকে। এরা মূলত শয়তান এর মতো পরিকল্পণা করে চলে। তাদের কাজ হলো
সবাইকে খারাপ কাজের প্রতি ধাবিত করা ও সভ্যতাকে শেষ করার কারণ যখন সবাই অসভ্যতার
দিকে অগ্রসর হবে তখনই এদের হাতে শাসন আসবে।
রাজনীতিবিদ
থেকে শুরু করে যে কোনো ধর্মের ধর্মীয় নেতা, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী,
পেশাজীবী তা সে যে কোনো দেশেরই হোক তাদের অনেকেই গোপনে এই সংগঠনের সদস্য যা হয়তো
তার পরিবারের লোকও জানে না। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বিশ্বের অনেক তারকাঅভিনেতা-অভিনেত্রী,
গায়ক এই ইলুমিনাতির সদস্য। ইলমিনাতির যে কয়েকটি সাইন আছে সেই সাইনগুলি বিভিন্ন সময়
তাদের প্রদর্শণ করতে দেখা গেছে। এক দু বছরের মধ্যেই হঠাৎ বিপুল তারকা খ্যাতি পেয়ে
যাওয়া অনেক তারকাকেই ইলুমিনাতির সদস্য ধারণা করা হয়, অনেকে মনে করেন, এই সংগঠনের
জন্যেই এতো দ্রুত তারকা খ্যাতি পাওয়া সম্ভব হয়েছে। আপনার আমার আশেপাশেই হয়তো এমন
অনেক প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব আছেন যাদের আমরা সম্মনের চোখে দেখি, তারাও হয়তো এর সাথে
কোন না কোনভাবে যুক্ত ইচ্ছা বা অনিচ্ছায়। সাধারণত এই লোকগুলো রাষ্ট্রের প্রচন্ড
ক্ষমতাধর এবং প্রভাবশালী হয়ে থাকেন।
স্যামুয়েল
চার্চিল ছিলেন গুপ্ত নিয় অর্লিন্স মার্ডি গ্রাস সোসাইটির একজন উচ্চ ক্ষমতাধর
সদস্য। এই সংগঠনটি ‘The Mystik Crewe Of Comus’ নামেও পরিচিত। এই সংগঠনটি ১৮৫৭
সালে মার্ডি গ্রাস উৎসবের পুনঃপ্রচলন করে যার একটি অংশ ছিল ‘স্কাল এন্ড বোন্স’
নামে। চার্চিল ২০০৫ সালে তার মৃত্যুশয্যায় মার্ডি গ্রাস সিক্রেটস নামে পরিচিত যে
স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন তাতে তিনি বলেন, ইলুমিনাতির রিং লিডার ছিলেন ক্যালেব কাশিং
নামে একজন মার্কিন কূটনীতিক যিনি উইলিয়াম রাসেল নামে একজন আফিম চোরাকারবারিরও
পার্টনার ছিলেন। এরাই মূলত ১৮৩২ সালে স্কাল এন্ড বোন্স সোসাইটি তৈরী করেন।
রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ঘটানোই এই সংগঠনের প্রধান কাজ। বিশেষত যারা ইলুমিনাতি কিংবা
রথসচাইল্ডের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে থাকে তাদের হত্যা করে বিশ্বের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক
ক্ষমতা দখল করাই এদের মূল উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন,
ইলুমিনাতি এজেন্ট বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হেনরী হ্যারিসন এবং টেইলরকে
হত্যা করে। তারা ১৮৫৭ সালে জেমস বুকাননকেও বিষ প্রয়োগ করে কিন্তু তিনি ভাগ্যগুনে
বেঁচে যান। এই তিনজনই বাধা দিয়েছিলেন ইলুমিনাতি-রথসচাইল্ড পরিকল্পিত ১৮৬০ থেকে
১৮৬৫ সালের মার্কিন গৃহযুদ্ধের পরিকল্পনায়। একই ডকুমেন্ট উল্লেখ করে যে,
প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন এবং সিনেটর হিউ লং হত্যাকান্ডেও ইলুমিনাতির হাত ছিল। এ
ছাড়াও উক্ত ডকুমেন্ট থেকে জানা যায় যে, প্রেসিডেন্ট কেনিডি, গারফিল্ড, ম্যাককিনলে
এবং ওয়ারেন হার্ডিংও নিহত হন ইলুমিনাতির যোগসাজশে।
মার্ডি
গ্রাস সিক্রেটস এর মতে আমেরিকা যদি তার গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে চায় তবে
দূর্নীতেকে প্রশ্রয় দিতে হবে। ঐতিহাসিকভাবে ’ইলুমিনাতি-রথসচাইল্ড‘ মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রকে নির্দিষ্ট ছকের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। যারা এই নিয়ন্ত্রণকে
অস্বীকার করেন তারা একটি ফ্যান্টাসির মধ্যে বসবাস করছেন।
বিশেষজ্ঞদের
মতে, মানুষ যতো ইচ্ছে যুদ্ধের বিরুদ্ধে, দূর্নীতির বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে,
শোষণের বিরুদ্ধে লেখালেখি, প্রতিবার আর সভা-সেমিনার করুক না কেন, কিছুতেই কিছু হবে
না। কারণ ইলুমিনাতি যেভাবে তাদের পরিকল্পণা করেছে এবং বাস্তবায়ন করছে তাতে তাদের
নিয়ন্ত্রণে চলছে পুরো পৃথিবী।
সূত্র:উইকিপিডিয়া,A
Summary of the Secret Society the ”Illuminati,” Drawn from the Works of Henry
Makow,
কোন মন্তব্য নেই