আসুন জেনে নেই সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ
অরণ্য ইমতিয়াজ: সন্তানের চেয়ে মূল্যবান
আর কি আছে বাবা-মায়ের কাছে? কিছু কি হতে পারে? না হতে পারে না, সন্তানের চেয়ে প্রিয় কিছু কখনোই হতে পারে না। এ
সম্পর্ক খারাপ হলে পরিবারে নানা জটিলতা আর অশান্তির সৃষ্টি হয়। মূলত সন্তানের মনে যদি
বাবা-মায়ের প্রতি বা বাবা-মায়ের মনে সন্তানের প্রতি নেতিবাচক ধারণা জন্ম নেয় তাহলে
সেই সংসারে শান্তির নাম দূরস্ত হয়ে যায়। এই নেতিবাচক ধারণা যেন জন্ম না নেয়, সংসার
যেন সুখের হয় এর পুরো দ্বায়িত্ব বাবা-মায়ের উপরেই বর্তায়। বাবা-মাকে সঠিক নিয়ম মেনে
সন্তানকে সুশিক্ষায় গড়ে তুলতে হবে, তাদের বুঝতে হবে সন্তানকে, সন্তানদের চাওয়াকে, সঠিক
উপায়ে বুঝিয়ে দিতে হবে তাদের ভালো মন্দ।
আসুন জেনে নেই সন্তানের
সাথে বাবা-মায়ের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ-
১। মায়ের সাথে সুন্দর সম্পর্ক :- ছোটবেলায়
শিশুরা বেশিরভাগ সময় যে মায়ের সাথেই
থাকে এ কথা ঠিক। তাই বলে যে মায়ের সাথে পরেও সম্পর্ক ভালো থাকবে এমন কোন কথা নেই কিন্তু।
সবসময় সম্পর্ক ভালো এবং সুন্দর সম্পর্ক রাখার জন্য অবশ্যই সে সম্পর্ক তৈরী করতে হবে
আর সেটা করতে হবে ছোটবেলা থেকেই।
২। সন্তানকে সময় দিন, তার পছন্দ-অপছন্দ জানুন :- ছোটবেলা থেকেই সন্তানের সাথে খেলাধুলা করুন, বই পড়ুন,
তার সাথে বসে টিভিতে শিশুদের অনুষ্ঠন দেখুন, অন্য শিশুদের সাথে মিশতে দিন, খেলতে দিন।
এতেই বোঝা যাবে আপনার সন্তানের পছন্দ- অপছন্দ, ভালো লাগা আর না লাগার কথা। শিশুর পছন্দকে
গুরুত্ব দিন তবে ওর পছন্দই যেন সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব না পায়।
৩। বাবা-মা দায়িত্ব নিতে হবে দুজনকেই :- সন্তানের সাথে ভালো এবং মধুর সম্পর্ক গড়া মা-বাবার
সমান দায়িত্ব তাই দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে সব বিষয়ে কথা বলুন। তাদের মনে এই ধারণার জন্ম
দিন আপনারাই তাদের আপন সবচেয়ে কাছের বন্ধু। এতে ছেলে-মেয়েরা সহজ হয়ে ওদের দু:খ, কষ্ট
ও সমস্যার কথা জানাতে দ্বিধা করবে না। এতে মানষিক চাপমুক্ত থাকতে পারবে শিশুরা।
৪। প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার যেন না হয় খেয়াল রাখুন
:- আজকাল প্রায়ই দেখা যায় একদিকে
মা, একদিকে বাবা, আর অন্যদিকে সন্তান যে যার মতো ব্যস্ত ফেসবুক, কম্পিউটার নিয়ে। অর্থাৎ
পরিবারের সদস্যদের ভেতর কথাবার্তা তেমন হচ্ছে না। তাই প্রয়োজন ছাড়া এই যন্ত্রগুলোকে
সরিয়ে রেখে দিয়ে নিজেদের মধ্যে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন, আনন্দঘণ সময় কাটান পরিবারের
সকল সদ্স্য মিলে।
৫। সন্তানের সামনে ঝগড়া নয় কখনোই :- বাবা-মায়ের নিয়মিত ঝগড়া সন্তানদের মনে গভীর নেতিবাচক
প্রভাব ফেলে। যা বড় বয়সেও তারা ভুলতে পারে না। এতে অসামাজিক হয়ে উঠে শিশুরা, কার সাথে
কেমন ব্যবহার করা উচিৎ বুঝতে পারে না, বিষন্নতায় ভুগতে শুরু করে তারা। বাবা-মা দুজনের
মতের অমিল বা ঝগড়া হবেই তবে সচেতন থাকতে হবে দুজনকেই তা যেন সন্তানের সামনে না হয়।
৬। শিশু বলে সরাসরি না নয়, তাদের মতামতকে গুরুত্ব
দিন :- পরিবারের সুখ- শান্তি রক্ষায়
আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। তাই শিশুকে শিশু না ভেবে একজন পরিপূর্ণ মানুষ গণ্য করে আলোচনায়
তাকেও অংশ করে নিন। তাকে বলার সুযোগ দিন এবং শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এর মধ্য
দিয়ে আপনার সন্তনটিও বুঝবে যে সে পরিবারের একজন সদস্য এবং ওর মতামতেরও মূল্য আছে। এতে
শিশুর দায়িত্ববোধ এবং অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাও বাড়বে।
৭। বকা বা ভয় নয়, শিশুকে বুঝিয়ে বলুন :- আজকের যুগের জীবনযাত্রা মোটেই সহজ নয়। কিন্তু তারপরও
আপনাদের দৈনন্দিন চাপ সন্তানদের উপর চাপিয়ে দিবেন না। শিশুদের মন খুব নরম হয়ে থাকে
তারা বাবা-মায়ের সব কথার উত্তর না দিলেও তা তাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে যা থেকে
যায় সারাজীবন। শিশুদের ভয় দেখিয়ে কখনোই কাছে
আনা যায় না। ওরা কোনো অপরাধ করলে তা নিয়ে সরাসরি আলোচনা করতে হবে। ছোটবেলায় সন্তানকে
ভয় দেখিয়ে কাজ হলেও বড় বয়সে কিন্তু আর সে সম্পর্ক সুন্দর থাকে না। আপনাদের সমস্যার
কথা সন্তানদের বুঝিয়ে বলুন, হয়তো তাদের কাছেই পেয়ে যাবেন ভালো কোনো সমাধান।


কোন মন্তব্য নেই