Tritiyo Limited

height="90"

Breaking News

ফাজিল সাহেবের বিয়ে



আম্মুর সাথে বসে বসে গল্প করছিলাম হঠাৎ বললাম,
-আম্মু একটা গল্প শুনবা যেটা আজ থেকে দশ বছর পরের একটা গল্প।
-ফাজলামি টাজলামি যদি না হয় তাহলে বল শুনি।
-দেখো আম্মু আজ থেকে দশ বছর পর কেমন হবে আমাদের বাসা এখন আঁখির বয়স ১০ বছর আরও ১০বছর পর হবে ২০বছর অর্থাৎ সেইসময় তার বিয়ে হয়ে যাবে।তুমি থাকবে বাসায় একা তখন তোমার দাঁতে ব্যাথা দাঁত নড়বড়ে,পিঠের হাড্ডিতে ব্যাথা,পায়ে ব্যাথার জন্য হাটতে পার না তখন তোমাকে ৮বছরের একটা মেয়ে পান সুপারি ছেঁচে মুখে তুলে দিবে,পা টিপে দিবে তারপর ২৭/২৮ বছরের একটা মেয়ে সব সময় ছুটাছুটি করবে আম্মু কি লাগবে শুধু অর্ডার করেন এখনি দিচ্ছি ঘর টা সব সময় ভরা থাকবে আঁখি যে চলে গেছে বুঝতেই পারবা না।
-হ্যাঁ রে তখন সেভাবেই থাকবে।।।
-তাহলে আম্মু আসো পয়েন্টে কথা বলি আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি বুঝতে পেরে গেছো আশা করি।।
-কি বুঝব?
-আরে আমারে বিয়া করাতে হবেনা নইলে ১০ বছর পর ৮বছর বয়সি বাচ্চা কোথা থেকে আসবে।।
-হারামজাদা ফাজলামি করছ এখন তুই বিয়া করবি।।
-এ কেমন বিচার ১০বছর পরের কথা ভেবে আমি তোমাকে এইসব বুঝালাম নইলে ১০বছর পর তো ঘর খালি হয়ে যাবে।।
-দূর হ ফাজিলের ফাজিল নইলে লাঠি দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিব।।
-এতক্ষণ তো হু হু করলা যে এইরকম ওই হবে এখন শেষের দিকে এসে সব নষ্ট করে দিলা।।
-তুই কি গেলি।।
.
আম্মুর সাইট থেকে এসে রুপা কে ফোন দিলাম বেচারি কত আশা ছিল আমার বউ হবে। মনে হচ্ছে এ জন্মে আর আশা পূরণ হবেনা।
-হ্যালো রুপা।।
-হুম বল।
-বিয়ে মনে হয় হবেনা আসলে আমিও ভাবছি বিয়ের বয়স হয়নি।।
-হ্যাঁ তুমি তো খোকা রয়েছো এখনো ফিডার খাও?
-খোকা না রয়ে গেলেও মাঝে মাঝে ফিডার খাই এটা সত্য।একদিন শোন কি হইছে আমার লতায় পাতায় আন্টি একজন তিনার বেবি কে ফিডার সহ আমার কাছে রেখে গেছেন। আমার হঠাৎ ইচ্ছে হল ফিডার খেয়ে দেখি কেমন লাগে যেই ভাবা সেইকাজ বাচ্চার মুখ থেকে বের করে দিলাম টান একটানে ফিডার শেষ বাচ্চা হাউ মাউ শুরু করছে এইসময় আন্টি এসে দেখেন আমার মুখে ফিডার বিরাট লজ্জার ব্যাপার তখন আন্টির দিকে তাকিয়ে বললাম আন্টি যা ভাবছেন তা না।আসলে আমি দুধে ফরমালিন আছে কিনা পরীক্ষা করছিলাম।ইদানিং এইসব দুধের মধ্যে মারাত্মক ফরমালিন থাকে যার জন্য বাচ্চার শরীরের উন্নতি হলেও মগজের উন্নতি হয়না বাচ্চা বড় হয়ে গাধা টাইপ স্টুডেন্ট হয়।।আন্টিকে দুধে ফরমালিন থাকার কারণে কি কি ক্ষতি হয় সেটা একঘন্টা বুঝানোর পর বললাম ঠিক আছে আন্টি। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন তোমার কি বেশি খিদা লাগছিল যে এইরকম একটা বাচ্চার ফিডার সম্পর্ণ খেয়ে ফেললা রাক্ষস নাকি?
-হাহাহা তুমি তো দেখছি একদম বাচ্চা হয়ে যাচ্ছো দিন দিন তারপর কি হল?
-তারপর কি হবে লজ্জায় আমি টমেটো হয়ে বাচ্চার ফিডার হাতে নিয়ে বললাম আন্টি ওয়েট করেন আমি দুধ ভরে নিয়ে আসছি।।
-হিহিহি তোমার লজ্জাও দেখছি আছে।
-এ কি বল লজ্জা থাকবেনা কেন?তবে আরেকবার লজ্জা নিয়ে টানাটানি পরছিল বিশ্বাকাপ খেলা চলছে বাংলাদেশ ব্যাটিং করছে তামিম ইকবাল অপেনিং এ উঠেই ছক্কা আমিও ছক্কার সাথে সাথে দিলাম চিৎকার এর পরে আবার ছক্কা দিলাম আবার চিৎকার ৩নাম্বার বলে আবার ছক্কা এবার চিৎকারের সাথে জোরে লাফ ও একটা দিলাম সাথে সাথে ওমা গো বলে চিৎকার কারণ আমি ঘুমে ছিলাম খাট থেকে ফ্লোরে লাফ দিয়ে পরছি।চোখ মেলে দেখি আমার ফ্যামিলি মেম্বার সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তবে লজ্জা তখন পেয়েছি যখন বিদেশ থেকে আসা সুন্দরী কাজিন বলল ভাইয়া তোমার মাথায় কি সমস্যা নাকি প্রথম দুইবার ছক্কা বলে চিৎকার দিলা শেষের বার চিৎকারে সাথে জাম্প মেরে ফ্লোরে পরে গেলা আমি তো তোমার কম্পিউটারে গেইম খেলছিলাম তোমার প্রথম চিৎকার থেকেই দেখছি জাম্প মারার সময় লুঙ্গি তো প্যারাসুট হয়ে আকাশে উড়ে যাচ্ছিল সাথে সাথে আমি লুঙ্গিতে হাত দিয়ে নিশ্চিন্ত হলাম লুঙ্গির নিচে প্যান্ট আছে বলে নইলে সেদিন ফ্যানে ঝুলে পরা লাগত।।
-হিহিহি তুমি তো একটা ফাজিলের ডিব্বা যাই হউক এখন রাখচ্ছি আম্মু ডাকছেন।।
-আচ্ছা যাও।।
.
রুপার সাথে কথা বলে ফোন রেখে দিলাম।৩/৪দিন পরের কথা সকালে উঠে আম্মু আমাকে বললেন,
-রেডি হয়ে যা তর জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি।
-এ কেমন কথা আমি বিয়ে করব না।।
-তরে করতেই হবে।।
-না আমি এই মেয়েরে বিয়ে করব না।।
-তুই করবি তর বাপ ও করবে।।
-একসাথে ২টা বিয়ের খরচ প্রচুর আসবে তবে বুদ্ধি করে এক সেন্টারে একসাথে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করলে খরচ কম আসবে কি বল?
-একসাথে ২টা হবে কেন?
-ওই যে বললে তুইও করবি আবার তর বাপ ও করবে অর্থাৎ বাপ বেটা একসাথে বিয়ে করার জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি।
-ফাজলামি করলে থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব যা রেডি হ।।
.
কি আর করা রেডি হয়ে আম্মু আব্বুর সাথে মেয়ে দেখতে গেলাম মনে মনে বললাম হায় রুপা তোমার সাথে আর হল না।।মেয়ে দেখে তো আমি ক্রাশ মেয়ে তো নয় যেন পরী মন টা লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে মেয়েটার সাথে কথা বলার জন্য নাম হচ্ছে আনিকা।।অবশেষে সেই সুযোগ আসল ১৫মিনিট সময় পেলাম কথা বলার জন্য তাও আবার একা তবে সমস্যা হল একা পেয়েও কথা বলতে পারছিনা এতদিনে বুঝতে পারলাম আমারও লজ্জা আছে।।শেষে বলেই ফেললাম..
-আপনার নাম টা খুব সুন্দর...
-ধন্যবাদ।।
-আচ্ছা বিয়েটা কি সত্যি হচ্ছে।।
-আপনার কি মনে হয়।
-মনে হয় বিয়েটা হচ্ছেনা দেখা গেল শেষে আপনি কৈ মাছের তেল দিয়ে কৈ মাছ ভেজে পগারপার হয়ে গেলেন।।
-মানে বুঝিনি।।
-মানে হল সব কিছু ঠিকঠাক বিয়ে হচ্ছে একদম শিওর সেই মুহূর্তে আপনি গয়না শাড়ি নিয়ে বিএফ এর হাত ধরে পালিয়ে গেলেন।এবং রেখে গেলেন লম্বা একটা চিঠি।অন্যদিকে আমি বেচারা মনের দুঃখে ফ্যানে ঝুলে পরলাম।এইরকম একটা ঘটনা আমার ফ্রেন্ডের সাথে হয়েছে।।
-আপনার কি এইরকম হবে বলে মনে হয়।
-মনে তো হচ্ছে।।
-তাহলে আপনি ঠিক ভেবেছেন আমরা এইরকম প্ল্যান করেছি।।
.
কন্যা দেখা শেষে বাসায় এসে রুপা কে ফোন দিলাম..
-হ্যালো রুপা কন্যা দেখতে গিয়েছিলাম।
-মানে কি বলছো সত্যি গিয়েছিলা।।
-সত্যি গিয়েছিলাম মেয়েটাও অসাধারণ।।
-তুমি তো দেখছি একটা খারাপ ছেলে তুমি না বলছিলা আমাকে বিয়ে করবা তাহলে মেয়ে দেখতে গেছিলা কেন?
-আমি তো বলেছি তোমাকে বিয়ে করব।কিন্তু এটা বলিনি যে রুপা তুমিই আমার একমাত্র বউ হবা।। তুমি হবা আমার ২নাম্বার বউ।।
-ফাজলামি কর জানে মেরে ফেলব।।
-সেটার প্রয়োজন নেই বিয়ে ক্যান্সেল হয়ে গেছে।।
-মেয়েদের পক্ষ না বলে দিয়েছে।।
-হ্যাঁ গো।।
-খুব ভাল করেছে।তা কি জন্য না করে দিল।
-আমি মেয়েটা কে বলেছিলাম তোমার কি কৈ মাছের তেলে কৈ মাছ ভাজার ইচ্ছা আছে।।
-সেটা আবার কি?এটার জন্য বিয়ে ক্যান্সেল হয়ে গেল।।
-হ্যাঁ এটার জন্য তবে এটার পিছনের অর্থের জন্য মূলত ক্যান্সেল হয়েছে।।
-হাহাহ তুমি সব কিছুতে সমস্যা করবা।।।
-ইচ্ছে করে করি নাকি?যাই হউক তবে বিয়েটা তোমার সাথেই হচ্ছে।।
-সেটা কবে শুনি।
-আমিও জানিনা তবে তোমার সাথেই হবে কারণ কবি বলেছেন "ভালবেসে যে পাপ করেছোস ব্যাটা,বিয়ে করে সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতেই হবে।"
-মানে কি?
-মানে প্রেম করছিলাম শখে বিয়ের পর সেই শখ যে বাঁশে পরিণত হবে সেটা কবি বুঝাতে চেয়েছেন আর কি?
-সেই কবির নাম কি?
-নাম জানতে চেয়ে লজ্জা দিও না বালিকা।
রুপার সাথে বকবক চলতেই থাকল আসলেই মেয়েরা বড্ড কথা বেশি কথা বলে।
.
আর হ্যাঁ কবি আর কে হবেন সেটা তো আপনারাই জানেন ধরে নিন এটা বাংলা রচনায় যেভাবে একজনের উক্তি আরেকজনের নাম দিয়ে লিখা হয় সেইরকম।একবার বাংলা রচনা আসছিল "বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধ" সেইখানে আমি একটা উক্তি দিয়েছিলাম সেটা হল বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তিনার কবিতায় বলেছেন "হাতে লও গদা বুকে লও সাহস।যেখানে দেখিবে শত্রু দাও বারি যেন হয় যায় মাংস হাড্ডি ছাড়াছাড়ি"।।এবার মাস্টর মশাই এই টাইপ কবিতা আছে কিনা যাচাই বাছাই করার জন্য রবীন্দ্রনাথের হাজার কবিতার মধ্যে খোঁজতে থাকুক পাবেন বলে মনে হয়না।।
.
লিখা- Ahmed Fahim(Fahim Ahmed Pappu)

কোন মন্তব্য নেই