রাজা আজ পা রাখেননি কোথাও

বিএফডিসিতে নায়করাজের পায়ের ছাপ এখনো মুছে যায়নি। কখনো মুছবে না। তবু গত রাতে একবার ভাবতে হয়েছে স্বজনদের, রাজ্জাক কি যাবেন বিএফডিসিতে? যদি বৃষ্টি থাকে? যানজট, মানুষের ভিড় এত কিছু ঠেলে সেখানে যাওয়া কি ঠিক হবে? ইউনাইটেড হাসপাতালের মর্গের সামনে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। বেশ রাতে গুলশানের বাসায় সিদ্ধান্ত হয়, হ্যাঁ, নায়করাজ শেষবারের মতো একবার যাবেন তাঁর সাম্রাজ্যে।
ভোরের বৃষ্টিতে আবারও একটু শঙ্কা জেগেছিল। কিন্তু বৃষ্টি থেমে যায়। স্নিগ্ধ পথ ধরে বেলা ১১টার কিছু পরে নায়করাজ পৌঁছান তাঁর কর্মক্ষেত্র বিএফডিসিতে। ততক্ষণে তেতে উঠেছে রোদ্দুর। আলিফ মেডিকেল সার্ভিসের শীতল গাড়ি নায়ককে নিয়ে গিয়ে থামে এফডিসির প্রশাসনিক ভবনের সামনে। সেখানে প্রস্তুত মঞ্চ, শোকের কালো চাদরে ঢাকা। সেই মঞ্চে নামানো হয়নি নায়ককে। আজ তিনি পা রাখেননি কোথাও। মঞ্চে রাখা হয়েছে ফুল। শীতল গাড়িটি সামনে রেখেই জানাজায় দাঁড়িয়ে পড়েছেন চলচ্চিত্রের স্বজনেরা। অনেকের চোখেই জল।
শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরকে দেখা যায় নায়করাজকে জানানো শ্রদ্ধার ফুলগুলো সরিয়ে সরিয়ে রাখছিলেন। জায়গা করে দিচ্ছিলেন অন্য ফুলগুলোর জন্য। সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান সারি বেঁধে নায়করাজকে একপলক দেখার জায়গা করে দিচ্ছিলেন সবাইকে। বড় পর্দার শত শত মুখ তখন সেখানে, একটি মুখ এক পলক দেখার জন্য উন্মুখ।
কথা বললেন অনেকেই
নায়করাজ রাজ্জাকের বড় ছেলে বাপ্পারাজ বলেন, ‘আমার আব্বা সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন। তাঁর আত্মা যেন শান্তিতে থাকে। আমার আব্বার ব্যবহারে যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে তাঁকে মাফ করে দেবেন।’
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের পথিকৃৎ রাজ্জাক ভাইয়ের অবদান ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি চলচ্চিত্র নিয়ে ভেবেছেন। আমরা সরকারিভাবে তাঁর এই কর্মকাণ্ডকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করব। যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তাঁর থেকে শিক্ষা নিতে পারে। আমি তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।’
ববিতা বললেন, ‘হঠাৎ এই খবরটা শোনার পর কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তাঁর সঙ্গে অনেকগুলো ছবিতে জুটি হয়েছিলাম। একে একে সেই স্মৃতিগুলো ভেসে উঠছে। কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না যে নায়করাজ আর নেই।’
শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন
নায়ক রাজ্জাককে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম, চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক ও গীতিকার মাজহারুল আনোয়ার, অভিনেতা আলমগীর, চিত্রনায়িকা ববিতা, শাবনূর, অভিনেতা শাকিব খান, সুব্রত, আলীরাজ, রুবেল, ফেরদৌস, ওমর সানি প্রমুখ। সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবার, সিনেম্যাক্স মুভি পরিবার, বাংলাদেশ আওয়ামী সাংস্কৃতিক লীগ, বাংলাদেশ ফিল্ম ক্লাব, চলচ্চিত্র গ্রাহক সংস্থা, চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি, সিনে স্থির চিত্রগ্রাহক সমিতি, জাসাসসহ বিভিন্ন সংগঠন।
শহীদ মিনারে ভক্তদের ঢল
এমনিতেই যানজট ভরা পথ। নায়করাজের আসার খবরে বেলা সাড়ে বারোটার আগেই শহীদ মিনার লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কালো ব্যানারের নিচে এবার রাখা হলো সাদা কাপড়ে মোড়ানো নায়কের দেহ। সামান্য ফুলে উঠেছে। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে শরীরের চারপাশ। শেষবারের মতো ফুল দিতে এসেছেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে নারীদের একটি দীর্ঘ সারি। বিভিন্ন বয়সের নারী। ভিড়, ধাক্কা, ঠেলাঠেলি উপেক্ষা করে তাঁরা একটু একটু করে এগিয়েছেন নায়কের মরদেহের দিকে। জোটের সভাপতি নাম ধরে মাইকে একে একে ডেকে নিচ্ছিলেন সংগঠনগুলোকে। ঘামে ভিজে চুপ চুপ মানুষগুলোকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় নায়করাজের পাশে ছিলেন তাঁর দুই সন্তান বাপ্পারাজ ও সম্রাট, চিত্রনায়ক জাভেদ ও শাকিব খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান
কোন মন্তব্য নেই