Tritiyo Limited

height="90"

Breaking News

ইতিহাস–সেরা হবেন অ্যান্ডারসন

মাঝেমধ্যে আমার রাগ হয়। এ ছাড়া আর কোনো অনুভূতি সাধারণত প্রকাশ করি না। কিন্তু আজকের দিনটা আলাদা। আজ একটু আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম।’
বক্তার নাম জেমস অ্যান্ডারসন। কথাগুলো বলছিলেন পরশু লর্ডসে ইতিহাসের মাত্র ষষ্ঠ বোলার হিসেবে ৫০০ উইকেটের মাইলফলক ছোঁয়ার পর। কেন দিনটা তাঁর কাছে আলাদা ছিল, সেটা আর ব্যাখ্যা করার দরকার কী?
নামের পাশে ৪৯৯ উইকেট রেখে শেষ করেছিলেন প্রথম ইনিংস। মাইলফলক ছোঁয়ার অপেক্ষা হয়তো তখন থেকেই শুরু। খুব বেশি দেরি অবশ্য করেননি অ্যান্ডারসন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই ক্রেগ ব্রাফেটকে বোল্ড করে ঢুকে গেলেন অভিজাত এক ক্লাবে। থামেননি সেখানেই। শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ার-সেরা বোলিং (৭/৪২) করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন ১৭৭ রানে। টেস্টে নিজের উইকেট সংখ্যাও নিয়ে গেছেন ৫০৬-এ!
মাইলফলক ছোঁয়ার পর তাঁর সম্মানে পুরো গ্যালারির দাঁড়িয়ে যাওয়া, সতীর্থদের অভিনন্দন—সব মিলিয়ে অ্যান্ডারসনের আবেগাপ্লুত হওয়ার কারণ ছিল বৈকি! আরেকটি কারণেও এদিন চোখগুলো আর্দ্র হয়ে উঠেছিল, ‘দর্শকদের মধ্যে আমার পরিবারও ছিল। আমি জানতাম, আমার মা-বাবা, আমার স্ত্রী ও সন্তানেরা আমাকে দেখছেন। তারাও এই মুহূর্তের সাক্ষী—এটা আমার জন্য বিশেষ কিছু। আমি কাঁদছিলাম না, তবে খুবই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম।’
২০০৩ সালে যখন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয়, ভাবেননি কোনো দিন এত দূর যেতে পারবেন। মাঝে ২০০৬ সালে চোটের কারণে তো ক্যারিয়ারই প্রায় শেষ হতে বসেছিল। সেই অ্যান্ডারসনই এখন পরিসংখ্যানে ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা বোলার! যে লর্ডসে তাঁর অভিষেক হয়েছিল, ৫০০-এর মাইলফলকও সেখানেই ছুঁয়েছেন। এ মাঠেও গতকাল পর্যন্ত ৯০ উইকেট। কোনো নির্দিষ্ট মাঠে কোনো পেসারের সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ড। সব মিলিয়ে দিনটা ৩৫ বছর বয়সী এই ইংলিশ পেসারের কাছে আসলেই বিশেষ, ‘আমার এখনো প্রথম উইকেটটার কথা মনে আছে। এখানেই ৫০০ ছুঁতে পারলাম বলে এটা আরও স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমার কাছে।’
অথচ ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ফাস্ট বোলার বা তাঁর সময়ের বিধ্বংসী পেসারদের মধ্যেও অ্যান্ডারসনের নামটা খুব জোরেশোরে আসেনি কখনো। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, এখন টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় সফল ফাস্ট বোলার অ্যান্ডারসন। সামনে শুধু কোর্টনি ওয়ালশ (৫১৯) ও গ্লেন ম্যাকগ্রা (৫৬৩)। বোঝাই যাচ্ছে, বেশ নীরবে নিজের কাজটা করে গেছেন অ্যান্ডারসন।
বয়স যত বাড়ছে, ধারও যেন বাড়ছে তাঁর। ক্যারিয়ারের প্রথম ৫০ টেস্টে ১৮১ উইকেট পেয়েছিলেন ৩২.০৮ গড়ে। পরের ৫০ টেস্টে ২০৩ উইকেট ২৭.৭১ গড়ে। আর সর্বশেষ ২৯ টেস্টে ১২২ উইকেট ১৯.৮৮ গড়ে! এভাবে এগোতে থাকলে ওয়ালশ বা ম্যাকগ্রাকেও ছাড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব মনে হচ্ছে না অ্যান্ডারসনের কাছে, ‘আমি খেলাটা খুবই উপভোগ করছি। এভাবে যদি আরও বছর দুয়েক খেলতে পারি, ম্যাকগ্রার কাছাকাছি তো যেতেই পারব।’
অবশ্য সাবেক ইংল্যান্ড উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান অ্যালেক স্টুয়ার্টের কাছে অ্যান্ডারসন এরই মধ্যে এক কিংবদন্তি, ‘অ্যান্ডারসন ক্রিকেটের সেরা বোলারদের একজন। ও যে এত দিন ধরে খেলে যাচ্ছে, এটাই তো অনেক বড় ব্যাপার।’
আরও কিছুদিন খেলে যেতে পারলে অ্যান্ডারসনকে ইতিহাসের সেরা ফাস্ট বোলার বলতে হবে বলেও দাবি স্টুয়ার্টের, ‘যদি ও আরও চার বছর খেলতে পারে, আরও ১৩০ থেকে ১৫০ উইকেট পাবে। আর যখন সে ম্যাকগ্রাকে পেরিয়ে যাবে, ওই হবে সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলার। আর এই সম্মানটা ওর প্রাপ্যও।’ ক্রিকইনফো।
                            ১০০  ২০০  ৩০০   ৪০০   ৫০০           
গ্লেন ম্যাকগ্রা (৫৬৩)        ২৩     ৪৫     ৬৪      ৮৭      ১১০
কোর্টনি ওয়ালশ (৫১৯)     ২৯     ৫৮     ৮০     ১০৭    ১২৯        
জেমস অ্যান্ডারসন (৫০০)   ২৯     ৫৫     ৮১     ১০৪    ১২৯

কোন মন্তব্য নেই