Tritiyo Limited

height="90"

Breaking News

ঢাকার লাইফ: ১ম পর্ব


Samrat Khan: আমার মত অনেকেই আছেন, ক্লাসের মাঝামাঝি অথবা পিছনের বেঞ্চগুলাতে বসত। সামনের দিকে বসলে দোস্তের সাথে কথা বলা যাইত না। স্যার ম্যাডামগণ খুব নজরদারির উপর রাখতেন। তবে ঐসময় বুঝতাম না নিজের কি ধরণের ক্ষতি করছি। পিছনে বসে প্ল্যান করতাম, মাস্তির প্ল্যান। বন্ধুদের প্র‍্যাংক করা সহ নানা বিষয়ে। বরাবরই মিঃ এভারেজ স্টুডেন্ট। দৌড় দিয়েও আসলে কোন লাভ ছিলনা। আমার সাথে যারা পড়াশোনা করত তারা ১০০০ এ মার্ক পাইত প্রায় ৯৮০'র মত। ঐ দিবা স্বপ্প দেখার সাহস পাইতাম না। তাই অগত্যা ৬০০ - ৭৮০ অব্দিই আমার দৌড় সীমাবদ্ধ ছিল পুরা ৬-১০ম পর্যন্ত। আর মাঝে মাঝে গণিতে ১০ এর নিচে পাওয়া ছিল আমার নিয়মিত ঘটনা। আমি নবমে দুই বছর পড়েছি। কারণ কিন্তু আমার গণিতের দুর্বলতা। ৩, ৬, ৯ আমার প্রথমবারের ৯মের গণিত মার্ক। আমার ক্লাস ম্যাটদের অনেকেই আছে যারা আমাকে পড়াইছে, কেউ কেউ আমাকে টিটকারিও করত। যাইহোক, পরের বছরের ব্যাসম্যাটরাই আসলে আমার মূল বন্ধুমহল। ওদের সাথেই আমি ইন্টার অব্দি পড়াশোনা করেছি। না আরেক দফা আমি ইন্টার মিডিয়েটে হোচট খাই। কলেজের টেস্ট এক্সামেই আমাকে আটকে রাখা হয়। আমার বন্ধু মহলের সবাই পাশ করে চলে আসে। আমি পরের বছর পাশ করি। সবাই ভর্তি হয়ে গেল আমি পরের বছর পাশ করলাম।

এতক্ষণ যা বললাম তাতে খেয়াল করে দেখেন আমি স্লো। হ্যাঁ, অনেক স্লো। আর এমন স্লোই আমি থাকতে চাই। আসলে আমি গণিত বোঝার মতই সব কিছুই জীবনে একটু ধীরে বুঝতে পারছি। এই যেমন আমার বন্ধুরা যখন নিজেদের প্রতিষ্টিত করার সকল পথ গোছায় ফেলেছিল আমি ঐ ট্রেনেই উঠতে পারি নাই। বন্ধুরা পাবলিক ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়া নিল। আর আমি দুই তিনটা পাবলিক ভার্সিটি ছাড়া ভালো ভার্সিটির ফর্মই উঠাইতে পারলাম না। কিন্তু ইচ্ছা অনুযায়ী একটা দারুন সুযোগ সামনে আসতেই লুফে নিলাম। সেটা সিএস এ পড়ার সুযোগ। তখন বিবিএ পড়ার যুগ। যারা প্রাইভেটে ভর্তি হইল তারা বিবিএ। যারা পাবলিকে পাইলো তাদের ইচ্ছার মূল্য কম। যেটা পাইল সেটাই নিল। উদ্দেশ্য একটাই পাবলিকে পড়তে হবো। হলোও তাই। কেউ কেউ নৃ বিজ্ঞানের মত সাব্জেক্টেই ঢুকে গেল। আমি সাব্জেক্টকে খারাপ বলছিনা। শুধু বলছি যে ভর্তি হলো সে নিজেও জানত না এই সাব্জেক্টে কি শেখানো হয়।
আমিও ওমন একটা সাব্জেক্ট পাইলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ওসব আমারে টানত না। আমার মাথায় পোকা কম্পিউটার। মেকার বা ইঞ্জিনিয়ার যাই হই। এটার সাথেই থাকবো। আমার বড় চাচা ও বাবা দুই জনেই আমারে সাহস করে দিলেন ভর্তি করায়। আর আমার বড় আম্মার(বড় চাচী) অবদানও আছে আমার ভর্তিতে। আমার কথায় গুরুত্ব দেয়া হলো। ভর্তি হলাম সিটি কলেজ, ন্যাশনাল ভার্সিটি। ঢাকার জীবন শুরু হলো।
বুঝতেছেন কিছু? আমি কিন্তু আবার পিছনে পরলাম। বন্ধুদের মত চালু ট্রেন মিস করলাম আবার। হ্যাঁ, ঐ স্কুল ও কলেজের মত বাজে রেজাল্ট এখানেও করা শুরু করলাম, মানে পাশ করি মাত্র, কোন ব্রেক নাই কিন্তু আমার ঝুলিতে স্কোরও নাই।
বন্ধুরা সবাই প্রথম সেমিস্টার যেতে না যেতেই কম্পিউটার কিনা ফালাইলো। আমার নাই। কিন্তু আমার স্বপ্ন কম্পিউটারে পোলাপানরে গান লোড কইরা ইনকাম করুম। অথবা টাইপিংয়ের কাজ করে। কিন্তু আব্বা রাজি হচ্ছেন না। অগত্যা মিথ্যা বললাম। বড় কাক্কার কাছেও মিথ্যা বললাম। পুরাপুরি মিথ্যা না। বললাম কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ি প্রোগ্রাম লিখায় কম্পিউটার ছাড়া হবে না। লাগবেই। কাক্কা আমার কথায় শায় দিলেন আমাকে বিশ্বাস করলেন। কিনা দিলেন কম্পিউটার। শুরু হলো কম্পিউটার নিয়া গবেষণা। প্রথমবার কম্পিউটার ঠিক করাইতে খরচ হইলো ১০০০ টাকা। গা জ্বলল। কিন্তু এই প্রতিশোধ উঠাইতে হব। টাকা গচ্চা গেল। তাই নিজে নিজেই শুরু করলাম শেখা। তখন কেবল মাল্টিপ্ল্যান হইছে। ওখানে এক দোকানে মাগনা খাটি। মাঝে মাঝে দুপুরে খাবার দেয় সাজেদ ভাই। মাস খানেকের ভিতর মোটামুটি সার্ভিসিং শেখা হলো সেই সাথে অনেকের সাথে পরিচয় হল। অনেক কম্পিউটার কিনে দেই কমিশন নেই। বাসায় গিয়া সার্ভিসিং করি টাকা পাই। ওখান থেকেই শুরু। দিন কিবা রাত। বাবা মা ছাড়া এই ঢাকাতে আমার একটাই সব থেকে কাছের বন্ধু। আর সেটা কম্পিউটার।
নীল ক্ষেতের একটা দোকানে অনেক দিন কাজ করেছি। ৪০ টাকা ঘন্টায়। মাঝে মাঝে ভাই আমারে এক্সট্রা টাকা দিত নির্ভুল কাজ করতাম সেই জন্য। অনেক ভালোবাসতেন। কারণ ঢাকায় অনেক পোলাপানের ভীরে আমার ৪০ টাকা ইনকামের স্পিরিট তার ভালো লাগত। আমার অনেক ক্লাসমেটরাও এইটা জানত না। আজ হয়ত শুনে অবাকই হবে। আরো একটা গোপন জিনিস বলি। কম্পিউটার সায়েন্সের বই কিনতো বন্ধুরা। আমি দোকান চিনাই দিতাম। ওখান থেকেও আমার কিছু কমিশন আসত। আমার যেসব ক্লাসমেট পড়ছিস আমার লেখা আমারে মাফ করে দিস। একদিন উনি আমাকে পরামর্শ দিলেন তুই বাংলা বাজার যা ওখানে ফর্মা হিসেবে বই লেখার কাজ নিতে পারবি, আর কাজ তুই ঘরে বসেই করতে পারবি। ওনার পরামর্শে গেলাম। তিন দিনের মাথায় একটা অর্ডার পাইলাম। কাজ করলাম। প্রথমবার জীবনে একসাথে ১৭৩০০ টাকা বিল পাইলাম ৩৪ দিন কাজ করার পর। রাত দিন খেটেছিলাম। একটা কম্পিউটার টেবিল ছিলনা আমার। স্পিকারের বেস বক্সের উপর স্যামসাংয়ের সি আর টি মনিটর। ডান স্পিকারের উপর মাউস বাম স্পিকারে কিবোর্ড। কাজটা করা কালিন সময় ভাবছিলাম একটা টেবিল কিনবো। কিনেও ছিলাম।
অবশিষ্ট লেখা চলতে থাকবে। তিন চার পর্বে শেষ হবে আশা করছি।
নোট: আমার লেখার মাধ্যমে আমি দেখাবো সফলতা আর প্রতিষ্ঠিত বিষয়ের তফাৎ।

কোন মন্তব্য নেই