Tritiyo Limited

height="90"

Breaking News

ঈদ যাত্রা

একদিন পরেই ঈদ।এবারের তেমন স্বস্তিদায়ক হবে না ধারণা করেই পা রাখলাম রাস্তায়। দুপুর ২.৩০। একটু আগের বৃষ্টির কল্যানে রাস্তায় হাটু পানি, যাই হোক রাস্তায় পানি থাকুক, আমি দাঁড়িয়ে থাকি বাসের জন্য। গন্তব্য বিমানবন্দর রেলস্টেশন। আমার ট্রেন সাড়ে চারটায় কিন্তু ৩.১৫ বেঁজে গেছে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম এখনো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি। এরকম সময়ই বারবার মনে হয় কেন একটি গাড়ী নেই আমার এবার সাথে আরেকটি আফসোস যোগ হলো কোটিপতি একটি বউ এই ঝামেলায় পড়তে হতো না আমাকে, বিরাট আফসোস। যাই হোক একটি লেগুনা এসে আফসোস থেকে বাঁচিয়ে দিলো আমাকে। লেগুনা তারপর বিআরটিসি অতঃপর বিমানবন্দর, ঘঁড়িতে ৩.৫৫। পকেটে টিকিটি নেই, এখন সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার। কাউন্টারে গিয়ে গন্তব্য জানিয়ে একটি টিকিট দিতে বলাতে উত্তরে বললো ভাংতি আছে ১৫ টাকা? আমি সবিনয়ে বললাম ১০টাকা আছে। শুনেই টাকাটা ছুড়ে দিলেন আমার দিকে। আমি বললাম আমার টিকিট? উনি বললেন ভাংতি নেই তো টিকিট নেই। পেছনে তাকিয়ে বললাম কারো কাছে পাঁচ টাকা হবে? একজন সহৃদয়বান ব্যক্তি তার মানিব্যাগ খুঁজে জানালো পাঁচ টাকা নেই তবে দশ টাকা আছে। আমি বললাম তাই দেন, উনার পাঁচ টাকা কম রাখার ক্ষমতা না থাকলেও আল্লাহ আমাকে পাঁচ টাকা বেশী দেয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন।
দাঁড়িয়ে আছি এখন ট্রেনের জন্য। প্রচুর মানুষ প্রস্তুত হয়ে আছে উঠার জন্য, তাই বুদ্ধি করে সবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, মনে মনে বাহবা দিলাম নিজেই নিজেকে এমন অসাধারণ বুদ্ধির জন্য।ট্রেনের হুইসেল শুনে প্রস্তুত হলাম, ট্রেন থামলো, উঠতে যাব কিন্তু বেশকিছু শারীরিক স্পর্শ আর শক্তিশালী ধাক্কাতে আমাকে আমি আবিস্কার করলাম শ’খানেক মানুষের পেঁছনে।ভেবে দেখলাম আমার মতো বলিষ্ঠ আর শক্তিশালী মানুষ এখন যদি আবার উঠতে যায় তাহলে এখন যারা উঠছে তাদের হয়তো আজ আর ট্রেনে যাওয়াই হবে না তাই আর সামনে না গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের যুদ্ধ দেখতে থাকলাম। নতুন উদ্যোমে বের হয়ে এলাম স্টেশন থেকে। ট্রেন আমাকে চিনলো না তো কি হয়েছে? বাস আমাকে চিনবেই!!! এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে এত্তো ভালোবেসে বাসগুলিকে ডাকলাম কিন্তু বাস এখন ডানা মেলেছে, পাত্তা আমাকে দিবে কি কারণে!!!
একটু পর একটা ট্রাক এসে থামলো। ঢাকাতে গরু নিয়ে এসেছিল, এখন আমাদের নিয়ে যেতে চায়। বুঝতে পারলাম গরু আর আমার মাঝে বিশেষ কোনো পার্থক্য ট্রাক চালক মহাশয় খুঁজে পাননি। ট্রাকের ছাঁদে আগে উঠিনি ব্যাপারটা এমন না, ছোটবেলায় যখন বিভিন্ন স্থানে খ্যাপ খেলতে যাওয়ার সময় তো এই ট্রাকের ছাঁদ আর বাসের ছাঁদ ছিল একমাত্র ভরসা। যাই হোক উঠে পড়লাম ট্রাকে।উঠার পরপরই আম্মার ফোন, কিরে কই তুই??? আমি বলিলাম আম্মা ট্রেনের টিকিট পকেটে নিয়ে আমি এখন ট্রাকের ছাঁদে। আম্মা বলিল আচ্ছা আয় আর মাঝে মাঝে ফোন করে জানাস। হায়রে কপাল ছেলে এতো কষ্ট করে যাচ্ছে একটু সহানুভুতিও জানালো না!!! একটু পর আশেপাশের লোকজন চিল্লিয়ে উঠলো ট্রাকের হেলপার মহোদয়ের প্রতি আর যদি একটি লোক তুলিস তাহলে তোকে ফেলে দিব ট্রাক থেকে। আমার অবশ্য সেদিকে নজর নেই কারণ যে ট্রাকে আমিই প্রথম উঠেছি সেখানে আমিই পা রাখার জায়গা পাচ্ছিনা। ভেবেও পাচ্ছি না আমি দাঁড়িয়ে আছি কি করে!!!
যাই হোক ঘোড়ায় চড়িয়া দুঃখিত ট্রেনের টিকিট কাটিয়া ট্রাকের ছাঁদে চলিতে লাগিলাম, দূর্ভোগ আরো বাড়াতে কিছুদূর যাওয়ার পরেই জ্যামে পড়িলাম। ঘন্টাখানেক পা অবশ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকার পরে জানিতে পারিলাম ১০ কি:মি: দীর্ঘ জ্যাম কখন ছাড়বে বলা যাচ্ছে না। এক সহযাত্রীকে ট্রাক ভ্রমনের অকাল প্রয়াণ ঘটিল এখানেই। এবার হন্টন দূরত্ব ওই যে ১০ কি:মি:। আমার হাঁটাতে কোনো আলসেমী নেই, বেশ ভালোবাসি হাঁটতে। ২.৩০ মিনিটে দূরত্ব পাড়ি দিয়ে ফেললাম। আমার সহযাত্রী অবশ্য কয়েকবার বিশ্রাম নিল, সেই সুযোগে আমিও একটু নিলাম আর কি। এরপরে আর কোনো ঝামেলা হয়নি আল্লাহর রহমতে। শুধু ভেবে পেলাম না ৩১ আগস্ট দুপুর ২.৩০ বের হয়ে পরদিন সকাল ৯টায় বাসায় পৌঁছলাম। দূরত্ব ১৩০ কি:মি:।
.
বি:দ্র: আসার পথে এতো আফসোসে পড়লাম, বাসায় যাওয়ার পর সবচেয়ে বড় আফসোস হলো, আহা এখন যদি আমার একটা বউ থাকতো!! পা’টা যে খুব ব্যাথা করছে!!!!!

কোন মন্তব্য নেই